ভারতীয় বায়ুসেনা পৃথিবীর অন্যতম সেরা সামরিক বিমানবাহিনীর মধ্যে একটি । শক্তির মাপকাঠিতে তার স্থান বিশ্বতালিকায় চতুর্থ । বর্তমানে একাধিক আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র কেনা হয়েছে ভারতীয় সেনার জন্য। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারতের একাধিক যুদ্ধের সরঞ্জাম।
যুদ্ধবিমান শব্দটি মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে প্রচলিত । ১৯০৬ সালে বিমান আবিষ্কারের পর থেকে যুদ্ধবিমান নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলতে থাকে । পরবর্তীতে বিমানকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু হয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মূলত কাঠের ফ্রেমে তৈরী বিমান ব্যবহার করা হত । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যে সব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হত, সেগুলো মূলত লোহার ফ্রেমে তৈরী । এদের বেগ সর্বোচ্চ ৪০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা । প্রথমে এক ইঞ্জিনের বিমান দেখা গেলেও পরবর্তীতে দুই ইঞ্জিনচালিত বিমান এর প্রচলন ঘটে । যুদ্ধ বিমানে টার্বোজেট এর ব্যবহার এবং নতুন প্রযুক্তি (যেমন রাডার) এর ব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত গবেষণা যুদ্ধবিমানকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
ভারতীয় বায়ুসেনা পৃথিবীর অন্যতম সেরা সামরিক বিমানবাহিনীর মধ্যে একটি । শক্তির মাপকাঠিতে তার স্থান বিশ্বতালিকায় চতুর্থ । বর্তমানে একাধিক আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র কেনা হয়েছে ভারতীয় সেনার জন্য। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারতের একাধিক যুদ্ধের সরঞ্জাম। এই রকম সব যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে ভারতের ব্যবহৃত দশটি শক্তিশালী যুদ্ধবিমানের নাম দেখে নিন।
সুখোই এসইউ ৩০
সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে অন্যতম হল সুখোই-৩০। ভারতীয় বিমানবাহিনী এই সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে । থ্রাস্ট-ভেক্টর কন্ট্রোল নামে একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে সুখোই-৩০ বিমানে। থ্রাস্ট-ভেক্টরিং-এর সুবাদে কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এত দ্রুত এগিয়ে যায় সুখোই-৩০। এর প্রাথমিক ব্যবহারকারীদের মধ্যে রাশিয়ান, আলজেরিয়ান, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম এবং পিপলস এয়ার ফোর্স অন্যতম। ১৯৮৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথমবার আকাশে উড়েছিল এই যুদ্ধবিমান।
ড্যাসল্ট মিরাজ ২০০০
এটি ফ্রেঞ্চ এয়ার ফোর্স (আর্মি দে এল’এর) মিরেজ ফোর্থ জেনারেশন কে প্রতিস্থাপন করার জন্য ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে ডিজাইন করা হয়েছিল। ১০ মার্চ ১৯৭৮-এ প্রথম বার আকাশের বুকে উড়ানো হয়েছিল এই যুদ্ধ বিমানটিকে। এই উন্নতমানের যুদ্ধবিমানটি একসঙ্গে ৬০০টি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং বর্তমানে ভারত সহ আরও আটটি দেশের কাছে রয়েছে এই মিরাজ ২০০০।
সুখোই এসইউ ২৭
সুখোই এর এসইউ-২৭, এসইউ-৩০ এয়ারক্রাফটসমূহ রাশিয়ান বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীতে ব্যবহৃত হয় । সুখোই-এর বিমানটি আর্মেনিয়া, চিন, ভারত, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র সহ আরও অনেক দেশে সরবরাহ করা হয়েছে । ২০০৬ সালের জুলাইয়ে ভেনেজুয়েলা ৩০ টি এসইউ-৩০ ক্রয়ের জন্য চুক্তি করে । রপ্তানি চুক্তি অনুসারে ২০০০ এর অধিক সুখোই এয়ারক্রাফট বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৭ এর ২০ মে প্রথমবার আকাশে উড়ানো হয়েছিল সুখই এসইউ ২৭ টি।
ড্যাসল্ট রাফাল
এই যুদ্ধবিমানটি বানিয়েছে ফ্রান্সের সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন। লাইট কমব্যাট এই যুদ্ধবিমানে রয়েছে প্রায় সমস্ত রকমের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ফ্লাই বাই ওয়্যার ফ্লাইট কনট্রোল সিস্টেম, অ্যাডভান্স ডিজিটাল ককপিট, মাল্টিমোড ব়্যাডার, ইন্ট্রিগ্রেটেড ডিজিটাল অ্যাভিওনিস সিস্টেম, ফ্ল্যাট রেটেড ইঞ্জিন। ১৯৯১ সালের ১৯ মে প্রথম উড়ানো হয়েছিল এই যুদ্ধ বিমানটিকে । প্রাথমিক ভাবে এর ব্যবহার হত ফ্রান্স এয়ারফোর্স, ফ্রান্স নেভি এবং ইজিপ্সিয়ান এয়ারফোর্স-এ।
এলসিএ তেজস
ভারতের এই লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফটে রয়েছে প্রায় সমস্ত রকমের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ফ্লাই বাই ওয়্যার ফ্লাইট কনট্রোল সিস্টেম, অ্যাডভান্স ডিজিটাল ককপিট, মাল্টিমোড ব়্যাডার, ইন্ট্রিগ্রেটেড ডিজিটাল অ্যাভিওনিস সিস্টেম, ফ্ল্যাট রেটেড ইঞ্জিন। এছাড়া তেজসে রয়েছে নাইট ভিসন কমপ্যাটিব্যাল গ্লাস ককপিট। তেজসের নির্মাতা ব্যাঙ্গালোরের সংস্থা এয়ারক্রাফটের নির্মাতা অ্যাডভান্স সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেশন অ্যাণ্ড এভালিউশন অর্গানাইজেশন (এএসআইইও) । সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তেজসে রয়েছে ব়্যাডার ওয়ার্নার রিসিভার, জ্যামার, লেজার ওয়ার্নার, মিশাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নার ।
মিকোয়ান গুরভিচ মিগ ২১
মিগ ২১ যুদ্ধবিমানটি মিকোয়ান ডিজাইন ব্যুরো মিগ ২১ বিমানের নকশা ন্যাটো কোডনেম ফিসবেড থেকে তৈরি। মিগ ২১-এর জন্ম হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে। এটি ইতিহাসে সর্বাধিক নির্মিত ফাইটার জেট। এটি মালালাইকা নামে অধিক পরিচিত ছিল। এর আগের জেনারেশনটি ছিল মিগ ১৯, যা ছিল মূলত গ্রাউন্ড অ্যাটাক ফাইটার। ১৯৪৮-৪৯ সালে সোভিয়েতরা মিগ-১৭, মিগ-১৯ এবং সুখোই-৭ এর সমন্বয়ে একটা সুপারসনিক ফাইটার বিমান তৈরি হয়। সর্বোচ্চ ৩৫০০ কেজি ওজনের অস্ত্র ৪ টি এন্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল রয়েছে এতে। আধুনিক এই যুদ্ধ বিমানের স্পিড হল ঘন্টায় ২,৩৫০ কিলোমিটার।
মিকোয়ান মিগ ২৭
এটি একটি গ্রাউন্ড অ্যাটাক যুদ্ধবিমান, যা মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নে মিকোয়ান-গুয়েরভিচ নকশা ব্যুরোর দ্বারা নির্মিত এবং পরে লাইসেন্স- ভারতবর্ষে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স দ্বারা বাহাদুর (“ভ্যালিয়েন্ট”) হিসাবে তৈরী করা হয়। ভারতে কার্গিল যুদ্ধের সময় ১৯৯৯ সালে প্রথমবার মিগ ২৭ এবং মিগ ২১ ব্যবহার করা হয়। আধুনিক এই যুদ্ধ বিমানের স্পিড হল ঘন্টায় ১৮৮৫ কিলোমিটার। সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ১৯৭৫ সালে ২০আগষ্ট প্রথম উড়ান হয়েছিল এই ফাইটার জেট এর।
মিকোয়ান মিগ ২৯
সোভিয়েত ইউনিয়নে পরিকল্পিত দুটো ইঞ্জিন বিশিষ্ট জেট ফাইটার বিমান মিগ ২৯। এটি ১৯৭০-এর দশকে মায়োয়ান ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা এয়ারফোর্সের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ বিমান হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯৭৭ সালের ৬ অক্টোবর রাশিয়ান বায়ুসেনার তরফ থেকে প্রথববার আকাশে উড়ানো হয় এটি । প্রাথমিক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছিল রাশিয়ান মহাকাশ বাহিনী, ভারতীয় বিমান বাহিনী, ইউক্রেন বিমান বাহিনী, উজবেকিস্তান এয়ার ও এয়ার ডিফেন্স ফোর্সেস। ভারত সহ পেরু, ইরাক, সিরিয়া আরও অন্যান্য দেশের কাছেও আছে এই উন্নতমানে যুদ্ধ বিমানটি ।
জাগুয়ার
এটি এখনও ভারতীয় বিমানবাহিনীর সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে আপগ্রেড আকারে সেবা করছে । এই যুদ্ধবিমানটি মূলত রোলস রয়েস তুর্বিমেকা অ্যাডোর টারবফান ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, যা প্রাথমিকভাবে জাগুয়ারের জন্যই তৈরী হয়েছিল । প্রাথমিক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স, ওমানের রয়াল এয়ারফোর্স, ফ্রান্সের এয়ারফোর্স ছিল অন্যতম । ১৯৬৮ এর ৮ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স এবং ইউনাইটেড কিংডম-এর যৌথ উদ্যোগ প্রথম আকাশে উড়েছিল সেপেকেট জাগুয়ার ।
সুখই এসইউ ৫৭
রাশিয়ার পঞ্চম প্রজন্মের সর্বাধুনিক জঙ্গিবিমান সুখোই-৫৭ । ২০১০ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে রাশিয়ার ফিফথ্ জেনারেশনের টি-৫০ ফাইটার জেট । বর্তমানে ফার্স্ট স্টেজের ইঞ্জিন ১১৭-এস রাশিয়ান ফাইটারে রয়েছে । সেকেন্ড স্টেজের নতুন ইঞ্জিনের এখনও নামকরণ করা হয়নি । এই বিমানটির নির্মাণপর্যায়ে নাম দেয়া হয়েছিল 'প্যাক এফএ' এবং 'টি-৫০' । রাশিয়া বলেছে, এসইউ-৫৭ বিমানটিকে শত্রুপক্ষের রাডার যাতে দেখতে না পায় সে জন্য এতে অত্যাধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে । বিমানটিকে কে-৭৭এম ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত করা হয়েছে যার পাল্লা ১২৫ মাইল । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা এখনকার সর্বাধুনিক এইম-১২০ডি ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা ১০০ মাইল । রাশিয়ার টি-৫০ (পিএকে এফএ) ফাইটার জেটের সিরিয়াল ইনডেক্স এসইউ-৫৭ ডিজাইনের ওপর এখনও পরীক্ষামূলক কাজ চলছে । ভারত এবং রাশিয়া সহ আরও অন্যান্য দেশের কাছে রয়েছে এই অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমানটি ।
Post A Comment: