যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান উত্তেজনা ও পরস্পর বাকযুদ্ধের কারণে সবার দৃষ্টিই এখন দেশ দুটির দিকে। রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এলে বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইরান নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এদিন ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি যুদ্ধ করতে চায়, তা হলে দেশটির আর কোনো অস্তিত্ত্ব থাকবে না।

তবে শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হুমকির পাত্তা দিচ্ছে না ইরান। উল্টো পারস্য উপসাগরে ইরানি আধাসামরিক বাহিনীকে ছোট ছোট নৌকায় ক্ষেপণাস্ত্র জড়ো করে রাখতে দেখা গেছে।

ইরানের সংসদবিষয়ক ও বিপ্লবী বাহিনীর উপপ্রধান মোহাম্মদ সালেহ জোকার বলেছেন, ইরানের স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পারস্য উপসাগরে থাকা মার্কিন যুদ্ধজাহাজে পৌঁছতে সক্ষম, নতুন যুদ্ধের সামর্থ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে উপসাগরীয় অঞ্চলে বিমান চলাচলে সতর্কতাও জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি বিষয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।

আগামী ৩০ মে আরব লীগ ও উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের এ বৈঠকে ইরানের সম্ভাব্য তৎপরতার বিষয়ে পর্যালোচনায় বসবেন আরব নেতারা।

যুক্তরাষ্ট্রসহ আরব দেশগুলো কেন ইরানের এমন তৎপরতায় ভয় পাচ্ছে?

ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর উপপ্রধান মোহাম্মদ সালেহ জোকার জানান, ২০০০ কিলোমিটার লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম, এমন বেশ কয়েকটি মিসাইল ইরানের সংগ্রহে রয়েছে। তিনি বলেন, দূরপাল্লার এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই পারস্য উপসাগরে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে আমরা হামলা করতে সক্ষম হব।

সম্প্রতি ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রবিষয়ক একটি মূল্যায়নের বরাতে আরবি বার্তা সংস্থা আল-মুহিত জানিয়েছে, স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ইরানের। এর মধ্যে শাহাব-১, ২ ও ৩ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বনিম্ন পাল্লা ২,০০০ কিলোমিটার। এ ছাড়া, সমগ্র ইরানে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করে রেখেছে তেহরান।

এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার অত্যাধুনিক রাডার শত্রুর শত শত বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম। তা ছাড়া দেশটির বিশাল নৌশক্তি রয়েছে, যা দিয়ে পারস্য উপসাগরে শত্রুর যেকোনো স্থাপনাই সহজেই হানা দিতে পারে ইরান।

খলিজ ফার্স মিসাইল

খলিজ ফার্স মিসাইল 
ইরানের দাবিমতে, শব্দের গতির চেয়েও দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র এটি। এটিকে যুদ্ধজাহাজ ও স্থলভাগ থেকে চালানো যায়। এ মিসাইলটিকে ইরান স্মার্ট মিসাইল হিসেবে গণ্য করে। ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর উপপ্রধান মোহাম্মদ সালেহ জোকার এ মিসাইলটি সম্পর্কে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খলিজ ফার্স মিসাইলটি তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট হানতে সক্ষম। এটির গড় ওজন ৬৫০ কিলোগ্রাম। ভবিষ্যতে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো প্রযুক্তি দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে।

শাহাব মিসাইল

শাহাব মিসাইল 
ইরানের বিখ্যাত ক্ষেপণাস্ত্র শাহাব মিসাইল। মোট ৬টি শাহাব মিসাইল রয়েছে ইরানের কাছে। রাশিয়ার ‘এস এস-১’ ক্ষেপণাস্ত্রের আদলে তৈরি করা হয়েছে এগুলো। লিবিয়ার ও উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় ইরান এ ক্ষেপণাস্ত্রটি বানিয়েছে।

শাহাব-৪ মিসাইলটি তিন হাজার কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত শত্রুদের ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম।

শাহাব সিরিজের মধ্যে শাহাব-৫ ক্ষেপণাস্ত্রটির ব্যাপারে ইসরাইলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, ইরানের কাছে থাকা মিসাইলগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী।

ফাতেহ-১১০

ফাতেহ-১১০ 
ইরানের হাতে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলোর মধ্যে ফাতেহ-১১০টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিরও কয়েকটি সিরিজ রয়েছে। সমুদ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রে এটি অনায়াসেই ব্যবহার করা যায়। ফাতেহ-৩১৩, জুলফিকার-৭০০, হরমুজ-১ এবং হরমুজ-২ সবই শক্রঘাঁটিতে ভালোভাবে আঘাত করতে পারবে।

কদর-১১০

কদর-১১০ 
ইরানের কদর ১১০ মিসাইলটি ইউরোপের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরানের দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র ‍হিসেবে এটি অন্যতম। এ মিসাইলটি শত্রুর চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে অনায়েসে ঢুকে যেতে পারে। শত্রুদের রাডার অনেক ক্ষেত্রে এটিকে ধরতে সক্ষম হবে না বলে দাবি ইরানের। ইউরোপীয় সীমানা পর্যন্ত কদর-১১০ মিসাইল দিয়ে আঘাত হানা যাবে। তাই এটিকে ইউরোপের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সূত্র: আল আরাবিয়্যাহ

Share To:

K. Nayeem

Post A Comment: