ক্রুজ মিসাইল কি এবং কিভাবে কাজ করে?

ক্রুজ মিসাইল মূলত একধরনের গাইডেড মিসাইল। যার মাধ্যমে অধিক দুরত্বের শত্রু টার্গেট গুলোকে ধ্বংস করা হয়ে থাকে। এই মিসাইল গুলো পুরোপুরি জেট ইঞ্জিন চালিত এয়ারক্রাফট এর মত কাজ করে৷

এই ক্রুজ মিসাইল গুলো সর্বপ্রথম ডেভেলপ করা হয় ১৯৩০-১৯৪০ এর দিকে অর্থাৎ যখন কেবল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন নাজী বাহিনী ভি-১ ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে, তখন এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা প্রকাশ পেলে বিধ্বংসী অস্ত্রের তকমা একে দেওয়া হয়।
আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রুজ মিসাইল খুবই কার্যকর বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে বারংবার বিবেচিত হয়েছে কারন ক্রুজ মিসাইলের হামলা প্রতিরোধ করা অনেকটাই অসম্ভব।

ক্রুজ মিসাইল মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
  • ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল
  • এন্টিশিপ ক্রুজ মিসাইল

ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইলঃ

ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল গুলোকে এমন ভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে এগুলো ভূমিতে থাকা স্থীর অথবা চলমান টার্গেটগুলো সহজেই ধ্বংস করতে পারে। যুদ্ধের ইতিহাসে জার্মান ভি-১ ছিলো প্রথম ব্যবহৃত ক্রুজ মিসাইল।
এগুলো প্রিমিটিভ মেকানিক্যাল গাইডেড হওয়ায় এগুলোর এক্যুরেসি খুব একটা ভালো না হলেও এগুলোর বিশাল সাইজের ওয়ারহেডের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছিলো মারাত্মক! যেখানে মডার্ন ক্রুজ মিসাইল গুলোর এক্যুরেসি দুর্দান্ত এমনকি কোনো বিল্ডিংয়ের জানালা দিয়ে প্রবেশ করে টার্গেট ডেস্ট্রয় করার মতও সক্ষমতা আছে!

যদিও একেকটি ক্রুজ মিসাইল প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার বা তার থেকেও বেশি, তবুও এদের মারাত্মক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এবং লং রেঞ্জের টার্গেট ধ্বংস করার সক্ষমতা থাকায় ক্রুজ মিসাইল পছন্দের তালিকার প্রথমেই।

যেখানে যুদ্ধবিমান দিয়ে শত্রুপক্ষের উপর হামলা করতে হলে শত মিলিয়ন ডলারের যুদ্ধবিমান এবং দেশের অমূল্য সম্পদ পাইলটদের জীবন হুমকির মুখে ফেলতে হয়, তাই ক্রুজ মিসাইল যথেষ্ট কার্যকর। হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশের লং রেঞ্জ ক্রুজ মিসাইল আছে, যেগুলো ২৫০০+ কি.মি দূরের টার্গেট গুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

এই মিসাইল গুলো ল্যান্ড, এয়ার, নেভাল শীপ, সাবমেরিন থেকে লঞ্চ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইলের প্রধান ব্যবহারকারী। তারা ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানে সর্বোচ্চ সংখ্যক হামলা করেছে ক্রুজ মিসাইল দিয়ে।

এন্টিশিপ ক্রুজ মিসাইলঃ

স্ট্রাকচারের দিকে খেয়াল করলে ল্যান্ড অ্যাটাক এবং এন্টিশিপ বা জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল গুলো প্রায় একই ধরনের কিন্তু গাইডেন্স সিস্টেম এবং ওভারহেড এর দিক হতে আলাদা। এন্টিশিপ মিসাইল গুলো যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ডেভেলপ করা হয়েছিলো কিন্তু এর ব্যবহার তখন দেখা যায়নি। তখনকার দিনে সমুদ্রের বুকে রাজত্ব করতো স্লো ফায়ারিং এর বিশাল ক্যালিবারের নেভাল গান গুলো! যেগুলোর এক্যুরেসি মোটেও ভালো ছিলো না, উপরন্ত সেগুলো ছিলো যথেষ্ট ব্যয়বহুল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র এন্টিশিপ মিসাইলের প্রোটোটাইপ তৈরি করলেও সর্বপ্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন এন্টিশিপ ক্রুজ মিসাইল তাদের বহরে যুক্ত করে। যেগুলোর বেশিরভাগই ছিলো সুপারসনিক গতির৷ পরবর্তীতে আমেরিকা তাদের বহরে যুক্ত করার কথা ভেবে প্রজেক্ট হারপুন চালু করেছিলো যাতে এই ধরনের মিসাইল দিয়ে ৪০ কি.মি. এর মধ্যে থাকা জাহাজ ধ্বংস করা যায়।

Exocet Cruise Missile

সোভিয়েতের প্রথম ৮০ কি.মি রেঞ্জের P-15 এন্টিশিপ মিসাইল গুলো ছিলো তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল এবং এর ৪৫০ কেজির ওয়ারহেডের বিধ্বংসী ক্ষমতা ছিলো মারাত্মক! কোল্ড ওয়ার চলাকালীন এই মিসাইল গুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের মিত্র দেশেও সরবরাহ করেছিলো।

পরবর্তীতে ফরাসী এন্টিশিপ মিসাইল Exocet সার্ভিসে আসলে পৃথিবী জানতে পারে একটি এন্টিশিপ মিসাইল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে! এটি অত্যন্ত সফল একটি মিসাইল। কয়েকটি যুদ্ধে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যক্ষমতা উপলব্ধি করতে পেরে মোড়ল দেশ গুলো নতুন করে গবেষণায় জোর দেয়।

কারন ১ মিলিয়ন ডলারের একটি মিসাইল দিয়ে সহজেই শত্রুর ৫০০ মিলিয়ন ডলারের জাহাজে হামলা করে ডুবিয়ে দেয়া যায়! আস্তে আস্তে এগুলোর চাহিদা বেড়ে যেতে শুরু করলে পুরাতন স্লো ফায়ারিং এর নেভাল গান গুলো জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে এবং একটা সময়ে নেভাল গান ছাড়াই শুধু এন্টিশিপ মিসাইল দিয়ে জাহাজ গুলোকে সজ্জিত করে বহরে যুক্ত করা হয়েছিলো!

প্রপালশনঃ

ক্রুজ মিসাইলে প্রধান প্রপালশন হিসেবে জেট ইঞ্জিন ব্যবহার কর হয়৷ সাবসনিক মিসাইল গুলোতে টার্বোফ্যান এবং টার্বোজেট, সুপারসনিক এবং হাইপারসনিক মিসাইল গুলোতে র‍্যামজেট এবং স্ক্র‍্যামজেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু রাশান কালব মিসাইল গুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে রকেট মোটর। এগুলো টার্মিনাল স্টেজে শব্দের গতির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি গতি প্রদান করে। তবে রকেট ইঞ্জিন ব্যবহার করলে জেট ইঞ্জিন চালিত মিসাইল এর তুলনায় রেঞ্জ অনেকটা কমে যায় এর বেশি ফুয়েল কনজাম্পশনের কারনে।
Propulsion System

ক্রুজ মিসাইলের স্পীডঃ

যে মিসাইল গুলো শব্দের গতির তুলনায় কম গতিতে চলে সেগুলোকে সাবসনিক বলা হয়। এই সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল গুলোর সব থেকে বড় সুবিধা হলো এগুলোর বিশাল রেঞ্জ! ৮০০ কিলোমিটারের বেশি রেঞ্জের যত ক্রুজ মিসাইল আছে সবগুলোই সাবসনিক গতির। সুপারসনিক মিসাইলের তুলনায় সাবসনিক মিসাইল গুলো সাইজে কিছুটা ছোট কিন্তু শুট ডাউন হওয়ার চান্স সুপারসনিকের তুলনায় বেশি।

যে মিসাইল গুলোর গতি ম্যাক-১ এর থেকে বেশি সেগুলোকে সুপারসনিক মিসাইল বলা হয়। শব্দের গতির তুলনায় বেশি গতির হওয়ায় এই মিসাইলের বিশেষ সুবিধা আছে। এত উচ্চ গতির কারনে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স সিস্টেম বলতে গেলে অসহায়। কারন শত্রুপক্ষ রাডার ধেয়ে আসা মিসাইল ডেটেক্ট করার পর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়তে খুবই কম সময় পায়। তবে সুপারসনিক মিসাইল গুলো তুলনামূলক কম রেঞ্জের হয় কারন এদের ফুয়েল কনজাম্পশন অনেক বেশি। যেখানে রেঞ্জ বৃদ্ধি করতে হলে মিসাইলের সাইজ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়বে যা অত্যান্ত ব্যয়বহুল! 

Cruise Missile Flight [Pattern]

ফ্লাইট প্যাথঃ

ক্রুজ মিসাইল গুলোর ফ্লাইট প্যাথ মূলত নির্ভর করে লঞ্চ প্লাটফর্ম, গাইডেন্স এবং টার্গেটের উপর। এন্টিশিপ মিসাইল গুলো সি স্কিমিং প্রোফাইল ফলো করে। অর্থাৎ, মিসাইল ফায়ার করা হলে এটি ওয়াটার সার্ফেসের মাত্র কয়েক ফুট উপর দিয়ে টার্গেটের দিকে ধেয়ে যায়। এই সিস্টেম মিসাইলকে শত্রুপক্ষের জাহাজের কাছে ইনভিজিবল করে দেয়। কারন, পৃথিবীর বক্রতার কারনে জাহাজে থাকা রাডার গুলো ৩০ কিলোমিটার দূরের ধেয়ে আসা সী স্কিমিং মিসাইল গুলোকে শনাক্ত করতে পারে না। কিন্তু যদি কোনো এয়ারবর্ন রাডারের সাহায্য নেয় তবে শনাক্ত করা সম্ভব। সী স্কিমিং মিসাইল গুলোর একটা অসুবিধা আছে সেটা হলো, যেগুলো মিসাইল হাই অলটিটিউড ফ্লাইট ট্র‍্যাজেক্টরি ফলো করে সেগুলোর তুলনায় এদের ফুয়েল কনজাম্পশন প্রায় ৩০-৪০% বেশি হয়!

মিক্সড ট্র‍্যাজেক্টরিঃ

কিছু কিছু ক্রুজ মিসাইল মিক্সড ট্র‍্যাজেক্টরি বা মিশ্র গতিপথ ব্যবহার করে টার্গেট অব্দি পৌঁছায়। এই ধরনের মিসাইল গুলো লঞ্চ করার পর এগুলো সরাসরি একটা সন্তোষজনক উচ্চতায় উপরে উঠে যায় এবং টার্গেটের দিকে চলতে শুরু করে। টার্গেটের কাছাকাছি চলে আসলে নিচে নেমে টার্গেট ডেস্ট্রয় করে। এতে করে শত্রুপক্ষের রাডার ফাঁকি দেয়া যায় এবং রেঞ্জ কিছুটা বৃদ্ধি করা যায়। এই মিসাইল গুলোর বেশিরভাগই টার্গেটের কাছে এসে সুপারসনিক গতিতে হিট করে।
Missile Flight Tracing


হাই অলটিটিউডঃ

যে মিসাইল গুলো এই প্যাথ ফলো করে সেগুলো লঞ্চ করার পর সোজাসুজি উপরে উঠে যায় তুলনামূলক অধিক উচ্চতায় এবং টার্গেট কাছাকাছি আসলে ধেয়ে নেমে টার্গেটে হিট করে। মূলত লং রেঞ্জ ক্রুজ মিসাইল গুলো এই ধরনের ট্র‍্যাজেক্টরি ফলো করে। কারন, অধিক উচ্চতায় মিসাইল গুলোকে লো রেজিস্ট্যান্স ফেস করতে হয় যার ফলে ফুয়েল কনজাম্পশন কম হয় এবং রেঞ্জ বৃদ্ধি পায়। তবে এই মিসাইল গুলো সাধারণত সাবসনিক গতির হয় যার কারনে শনাক্ত করে শুট ডাউন করাও সম্ভব।

লঞ্চিং প্ল্যাটফর্মঃ

Air Launched Cruise Missile


এয়ারক্রাফটঃ

ক্রুজ মিসাইল লঞ্চিং এর জন্য এয়ারক্রাফট খুব ফাস্ট এবং ফ্লেক্সিবল প্ল্যাটফর্ম। বেশিরভাগ এন্টিশিপ মিসাইল গুলো এয়ারলঞ্চ করা হয়ে থাকে কারণ একটি এয়ারবেজ থেকে একটি এয়ারক্রাফট টার্গেটে মিসাইল লঞ্চ করে নিরাপদে বেজে ফিরে আসতে মাত্র কয়েক মিনিটই যথেষ্ট।

যার কারনে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় এয়ার লঞ্চিং বেশ নির্ভরযোগ্য। ফকল্যান্ড ওয়ারে এয়ার লঞ্চড এক্সোসেট মিসাইল দিয়ে বৃটিশ জাহাজ ডুবে গেলে এয়ারলঞ্চড প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। দৈত্যাকার Tu-95/160 বা B-52 এর মত বোমারু বিমান গুলো ১৫-২০ টি এন্টিশিপ মিসাইল বহন করতে পারে। যুদ্ধাবস্থায় এদের এয়ারবর্ন মিসাইল ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে অনায়াসেই।

গ্রাউন্ড ভেহিক্যালঃ

ট্রাক এবং ফিক্সড লাঞ্চার গুলো মূলত ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল গুলো লঞ্চ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। যুদ্ধাবস্থায় ট্রাক ব্যবহার করে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মিসাইল ডেপ্লয় করা যায় আর ঘনঘন ও দ্রুত স্থান পরিবর্তনের কারনে শত্রুপক্ষ এই লঞ্চিং প্ল্যাটফর্ম গুলো ধ্বংস করতে পারে না।

নেভাল শিপঃ

নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ গুলো অধিক পরিমানে ক্রুজ মিসাইল বহন করে থাকে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায়। নেভাল শিপ গুলো এন্টিশিপ এবং ল্যান্ড অ্যাটাক দুই ধরনের মিসাইল’ই বহন করে থাকে। এন্টিশিপ গুলো সমুদ্রের টার্গেট এবং ল্যান্ড অ্যাটাক গুলো অনেক দূরের ভূমিতে আক্রমণ করার জন্য বহন করে থাকে। মার্কিন নেভির সমস্ত ডেস্ট্রয়ার-ক্রুজার লং-রেঞ্জ টমাহক বহন করে। রাশিয়াও অবশ্য থেমে নেই তারাও তাদের প্রথম সারির যুদ্ধজাহাজ গুলোতে লং-রেঞ্জ সুপারসনিক মিসাইল ইন্সটল করেছে।
Submarine Launched Missile [Pattern]

সাবমেরিনঃ

ক্রুজ মিসাইল লঞ্চিং এর ক্ষেত্রে খুবই স্টেলথি এবং ভয়ঙ্কর প্ল্যাটফর্ম হলো সাবমেরিন। কারণ এটি পানির নিচ হতেই টার্গেটে হামলা করে সমুদ্রের গভীরে চলে যেতে পারে। এই বিশেষ সুবিধার কারনে যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুর পক্ষে একে শনাক্ত কিংবা ধ্বংস করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সাবমেরিনগুলো ভার্টিক্যাল বা টর্পেডো টিউবের মাধ্যমেও ক্রুজ মিসাইল লঞ্চ করতে পারে। আধুনিক সাবমেরিন গুলো একই সাথে অনেকগুলো এন্টিশিপ+ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল বহন করতে পারে। মার্কিন নেভির নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড ওহাইও ক্লাস সাবমেরিন গুলো ১৫৪ টি টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল বহন করতে পারে৷ 

 মিসাইল লঞ্চিং টেকনিকঃ

কোল্ড লঞ্চঃ

এই পদ্ধতিতে কমপ্রেসড এয়ার ব্যবহার করে মিসাইল গুলোকে লঞ্চ টিউব থেকে ইজেক্ট করানো হয়। এক্ষেত্রে মিসাইলের ইঞ্জিন চালু হয় টিউব থেকে শূন্যে ইজেক্ট করার পর। এই ধরনের ইজেকশনের কারনে লঞ্চ টিউব গুলোর দীর্ঘস্থায়ী হয় ও বেশিদিন সার্ভিস দিতে পারে৷ এটাকে সবথেকে নিরাপদ লঞ্চিং সিস্টেম বলা হয় কারন, টিউবের ভিতরে ইঞ্জিন চালু না হওয়ায় কোনো দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। মূলত জাহাজ থেকে স্যাম (Surface to Air Missile – SAM) গুলোকে কোল্ড লঞ্চ করানো হয়, তবে সাবমেরিনে কোল্ড লঞ্চিং এর ব্যবহার সব থেকে বেশি।

হট লঞ্চঃ

এই পদ্ধতিতে লঞ্চারের মধ্যে থাকাকালীন মিসাইলের বুস্টার প্রজ্বলিত হয় এবং মিসাইল নিজে নিজেই টিউব থেকে বেরিয়ে আসে। এক্ষেত্রে লঞ্চারের লাইফটাইম কমে যায় এবং ব্যাক-ব্লাস্ট হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। লঞ্চ টিউব এর ভিতরে মিসাইলনের ইঞ্জিন চালু হওয়ায় প্রচন্ড তাপ নির্গত হয় যার কারনে একে হট লঞ্চ বলে।

Russian Cruiser With Angled Launcher


এঙ্গেলড লঞ্চঃ

এই লঞ্চিং ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট এঙ্গেলে মিসাইল মাউন্ট করা থাকে৷ এই পদ্ধতি মূলত একেবারেই প্রথম দিকের মিসাইল সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ গুলোতে ব্যবহার করা হতো। প্রথম জেনারেশনের মিসাইল গুলোতে খুব একটা উন্নত গাইডেন্স সিস্টেম না থাকায় কোনো টার্গেটে হামলা করার জন্য যুদ্ধজাহাজটিকে টার্গেটর দিকে ঘুরিয়ে বা মুভ করিয়ে মিসাইল লঞ্চ করাতে হতো। 
এঙ্গেলড লঞ্চ পদ্ধতি জাহাজের মিসাইল বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করলেও সেকেলে প্রযুক্তির কারনে বেশ স্লো প্রোসেস ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মডার্ন মিসাইল গুলো লঞ্চ করার ক্ষেত্রে জাহাজকে কোনো দিকে মুভ করানোর প্রয়োজন হয়না, লঞ্চ করার পর মিসাইল নিজেই তার টার্গেট খুজে নেয়। এটি জাহাজের সার্ফেসে খুব সহজেই ইন্সটল করা যায় এবং ডেকের যায়গা ব্যবহার না করায় জাহাজ বেশি পরিমানে মিসাইল বহন করতে পারে। এই বিশেষ সুবিধার কারনে এই লঞ্চিং সিস্টেম এখনও সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।

বক্স লঞ্চারঃ

বক্সের মত আকৃতির এই ধরনের লঞ্চার গুলো মার্কিন নেভি ব্যপকভাবে ব্যবহার করে। তারা প্রথম বক্স লঞ্চার ব্যবহার শুরু করে ৭০ এর দশক থেকেই। একেকটা লঞ্চারে ৮ টা করে বক্স থাকে। এক্সপার্ট দের মতে এই ধরনের বক্স লঞ্চিং টমাহকের জন্য বেশ সুবিধাজনক। রয়েল নেভিও এই ধরনের বক্স লঞ্চার ব্যবহার করে তাদের এক্সোসেট মিসাইল গুলোর ক্ষেত্রে।

MK-41 VLS ভার্টিক্যাল লঞ্চারঃ

ভার্টিক্যাল লঞ্চিং সিস্টেমকে বলা হয় সব থেকে আধুনিক এবং জনপ্রিয় মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম। কারন, অন্যান্য লঞ্চিং ব্যবস্থার তুলনায় এর সুবিধা সবথেকে বেশি। এর সাইজ, সিমপ্লিসিটি, দ্রুত মিসাইল লঞ্চ করার ক্ষমতা সহ সব ধরনের সুবিধা থাকায় এটির জনপ্রিয়তা শীর্ষে।

মিসাইল গুলো VLS এর ক্যানিস্টারে স্টোর করা থাকে ফলে কোনো ধরনের মেইনটেনেন্স প্রয়োজন হয়না৷ ভিএলএস মূলত মিসাইলের ধরন ভেদে ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র U-VLS প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে, যা একইসাথে সবধরনের মিসাইল লঞ্চ করতে পারে। আশা করা যায়, এটি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা পেতে চলেছে।

গাইডেন্সঃ

সঠিক নিশানায় হামলা হামলা করার জন্য মিসাইলের গাইডেন্স সিস্টেমের প্রয়োজন হয়। জিপিএস, লেজার, টিভি, ইনফ্রারেড, ইনার্শিয়াল গাইডেন্স সিস্টেম বা এগুলোর কম্বিনেশনেও মিসাইল গাইড করে টার্গেট অব্দি নিয়ে যাওয়া হয়।

জিপিএসঃ

জিপিএস গাইডেন্স মূলত নির্ভর করে স্যাটেলাইটের উপর। স্যাটেলাইটের সাহায্য নিয়ে ভূমিতে থাকা স্থীর টার্গেট গুলোতে এক্সট্রিম এক্যুরেট ভাবে হামলা করা যায়। এর সাথে টিভি গাইডেন্স ব্যবহার করা হয়, যা টার্গেট ডেস্ট্রয় করার পসিবিলিটি কয়েকগুন বৃদ্ধি করে দেয়।

লেজার গাইডেন্সঃ

লেজার গাইডেন্স মূলত শর্ট রেঞ্জ ক্রুজ মিসাইল গুলোতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে একটি টার্গেটিং সিস্টেম টার্গেটকে লেজার পয়েন্টেড রাখে যাকে বলে লেজার পেইন্টিং। মিসাইলে একটি লেজার সিকার থাকে যা লেজার পেইন্টিং ডেটেক্ট করে টার্গেট ডেস্ট্রয় করে। এটি খুব একটা এক্যুরেট গাইডেন্স সিস্টেম নয় কারন যুদ্ধক্ষেত্রে ধোয়া, ঘন-কুয়াশা, ধুলাবালি, খারাপ আবহাওয়া কিংবা টার্গেট যদি লেজার শোষণ করার মত ম্যাটেরিয়াল দিয়ে কোটেড করা থাকে তাহলে মিসাইল সঠিক টার্গেট খুজে নাও পেতে পারে।

ইনার্শিয়াল গাইডেন্সঃ

এই গাইডেন্স সিস্টেমের সাথে অনেকেই পরিচিত নন। এটি একেবারেই পুরাতন এবং সিম্পল একটি গাইডেন্স সিস্টেম। এটি যদিও একেবারে শুরুর দিকের গাইডেন্স সিস্টেম তবুও মিসাইলের এক্যুরেসি বৃদ্ধি করার জন্য এক্সট্রা গাইডেন্স প্রদান করতে এটি এখনও ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত প্রি-প্রোগ্রামড ফ্লাইট প্যাথ এবং মোশন ও জাইরোস্কোপ সেন্সরের সাহায্যে টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছানোর পরে জিপিএস এবং ইনফ্রারেড এর মাধ্যমে টার্গেট ডেস্ট্রয় করে। এর প্রোগ্রাম এভাবে করা হয়ে থাকে

উদাহরণ হিসেবেঃ Fly at 350m for 80 sec, Change direction 8 degrees to southeast, decrease altitude to 100m and increase speed to 450 knots.
ব্রাহ্মস মূলতো এই কম্বিনেশন গাইডেন্স ব্যবহার করে।

টিভি গাইডেন্সঃ

এটি একেবারেই সাধারণ একটি গাইডেন্স সিস্টেম শর্ট রেঞ্জের মিসাইল গুলোতে টিভি গাইডেন্স এবং লং রেঞ্জ গুলোতে কম্বিনেশন গাইডেন্স ব্যবহার করা হয়। মিসাইলের নোজে একটি টিভি ক্যামেরা সেট করা থাকে। মিসাইল টার্গেটের কাছে পৌঁছালে অপারেটর স্ক্রিনে ইমেজ দেখে টার্গেট চিহ্নিত করতে পারে এবং মিসাইলকে সঠিক টার্গেট অব্দি গাইড করতে পারে, কাজেই এটিকে বেস্ট গাইডেন্স সিস্টেম বলা হয়।

এটি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশেষ করে সিভিলিয়ান এরিয়ায় সিভিলিয়ান ক্যাজুয়ালিটি কমানো যায়। মার্কিন টমাহকে এই গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।

ইনফ্রারেড গাইডেন্সঃ

এটি মূলত প্রাচীন গাইডেন্স সিস্টেম। এই মডার্ন ওয়ার-ফেয়ার এর যুগে প্রাইমারি গাইডেন্স ইনফ্রারেড হলে টার্গেটে হিট করার চান্স খুবই কম থাকে এবং খুব সহজেই ফ্লেয়ার দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট করা যায়। এর সামনে একই প্রকৃতির কয়েকটা টার্গেট থাকলে এটি আসল টার্গেটকে চিনতে পারে না বা ফিল্টার করতে পারে না৷

রাডার গাইডেন্সঃ

ক্রুজ মিসাইল গাইড করার ক্ষেত্রে সব থেকে জনপ্রিয় ও কার্যকর গাইডেন্স সিস্টেম এটি। লঞ্চিং প্ল্যাটফর্মের ফায়ার কন্ট্রোল রাডার এবং মিসাইলের একটিভ/প্যাসিভ রাডারের সমন্বয়ে এটি মিসাইলকে সঠিক টার্গেট অব্দি পৌঁছে দেয়।

ওয়ারহেডঃ

কোন ধরনের টার্গেট ডেস্ট্রয় করতে হবে তার উপর নির্ভর করে ওয়ারহেড ব্যবহার করা হয়। 
তবে প্রচলিত ওয়ারহেড গুলোঃ
  • হাই এক্সপ্লোসিভ
  • সেমি আর্মার পিয়ারসিং
  • হাই এক্সপ্লোসিভ ফ্র‍্যাগমেন্টেশন
  • নিউক্লিয়ার

Share To:

K. Nayeem

Post A Comment: